Blog: এআই -আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স নাকি অগমেন্টেড ইন্টেলিজেন্স?
সিরি, কর্টানা, এলেক্সা, গুগল এসিসটেন্ট –এগুলো পুরান কথা। ২০১৬ সালের সোফিয়ার হিউম্যানয়েড অংশটি বিয়োগ করলেও কিন্তু সমীকরনে নতুন কিছু বলার থাকেনা। আর ২০১৯ সালে এসে যদি আমরা সোফিয়ার চেহারাটা বাদ দিয়ে কার্ডবোর্ডের ভিতরে স্মার্টফোন বা কোন ওপেন সোর্স প্রোগ্রামের উপর হালকা কোড করে র্যাস্পবেরিপাই বসিয়ে সেই পুরান প্রতিধ্বনিই শুনাই আর বলি এগুলো “এআই” তাহলে আমি বলবো এগুলো কূপমন্ডুকতা অথবা মার্কেটিং স্টান্ট।
আমরা চ্যাট-বট বানিয়ে বলছি –এটা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (জিব্বায় কামড়)। মনে রাখবেন, “চাচা চৌধুরীর মস্তিষ্ক কম্পিউটারের চেয়েও প্রখর।” –নব্বইয়ের দশকে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের বিনোদনের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল নানা কল্পকথা ও কমিক্স। চাচা চৌধুরী, টিনটিন –এই চরিত্রগুলোর কথাবার্তায় সেসময়ের চিন্তাধারা ফুটে ওঠে। কম্পিউটারের এক ক্লিকেই নাকি মুশকিল আসান হয়ে যেত ঊনিশ শতকে। কিন্তু ধীরে ধীরে আমরা বুঝতে পারলাম সেই কম্পিউটার বলতে আমরা পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসিকে বুঝি। অথচ দৈনন্দিন জীবনে সবজায়গায় কম্পিউটার –হাতের ঘড়ি, ক্যালকুলেটর থেকে শুরু করে ট্রাফিক সিগনাল পর্যন্ত ঠিক যেমন “হোন্ডা” বলতেই বুঝি সিগনালে দাঁড়িয়ে থাকে পিপড়ার মত মটর সাইকেলগুলো। বর্তমানের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) –এর ধারনাটা কি অনেকটা এরকম নাকি নির্বুদ্ধিতার কোন স্টেরিওটাইপ?

আমরা ছোটবেলায় বড়দের যা করতে দেখি যেভাবে করতে দেখি, টেলিভিসনে, ইউটিউবে যেভাবে দেখি সেভাবেই নকল করি। শিশুরা নাকি অনুকরন প্রিয়। আসলে এটি শিশুরদের বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। বুদ্ধিমত্তা হলো জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন ও প্রয়োগের ক্ষমতা। মানে হলো দেখে শেখা এবং শিখে সেটা করা। আস্তে আস্তে আমরা বড় হই। আমাদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় (শিক্সথ সেনস) বিকাশ পায়। আমরা দ্রূত সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমাদের অবচেতন মন (সাবকনসাস মাইন্ড) কাজ করে। এমনি এমনি করেনা। আমাদের মাথায় নানা রকম কোটি কোটি তথ্য সংরক্ষিত থাকে যা বাইনারিতে চিন্তা করলে হয়তো যেটাবাইট ছাড়িয়ে যাবে। তারপরও আমাদের মস্তিষ্কের নাকি মাত্র কয়েক শতাংশ আমরা ব্যবহার করি। আলহামদুলিল্লাহ মানুষের মস্তিষ্কের ধারনক্ষমতা ও সামর্থ্য প্রতিস্থাপনের চিন্তা শুধু মানুষই করতে পারে। কারন “বুদ্ধিমত্তা” আল্লাহ প্রদত্ত। কৃত্রিম মানে প্রাকৃতিক কোনকিছুর নকল বা বিকল্প। মানুষের বুদ্ধিমত্তার বিকল্প ব্যপারটি কিন্তু ছেলে খেলা না। তাহলে এই যে নতুন প্রজন্ম এত কিছু করছে, এগুলো কি? এগুলো কিছুই না। হাই স্কুল প্রজেক্ট হিসাবে পার্ফেক্ট আছে কারন ইংরেজিতে “রিইনভেন্টিং হুইল” বলে একটা কথা আছে। খুব সিরিয়াসলি যদি কেউ এটা করে ইনোভেসন দাবী করে তাহলে নতুন করে চাকা আবিষ্কার করার মতই ব্যপারটা। পরিবর্তনের যুগে এআই এখনও পরিপক্ক হয়নাই। আমরা যদি এগুলোকে এআই বলি, এগুলা আসলে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা) না বরং অগমেন্টেড ইন্টেলিজেন্স (বর্ধিত/সহায়ক বুদ্ধিমত্তা)। কারন কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা হচ্ছে বুদ্ধিমত্তার প্রতিস্থাপন। এখন আপনরাই বলেন যাকে আমরা এআই বলছি তারা কি আমাদের বুদ্ধিমত্তাকে প্রতিস্থাপন করেছে?
অগমেন্টেড ইন্টেলিজেন্স মানুষের বুদ্ধিমত্তার বর্ধিত অংশ। আজকাল অগমেন্টেড রিয়েলিটি আমরা সবাই বুঝি, যা রিয়েলিটি বা বাস্তবতাকে সহায়তা করে। বাস্তব এবং ভার্চুয়ালকে নিয়ে একসাথে কাজ করে। এটি ভার্চুয়াল রিয়েলিটি থেকে ভিন্ন। বর্ধিত/সহায়ক বুদ্ধিমত্তা হলো মানুষের বুদ্ধিমত্তার পরিপূরক। এটি এবং মানুষ একসাথে কাজ করে। সহায়ক বুদ্ধিমত্তা কিন্তু ইতিমধ্যেই ডেটা সায়েন্স এবং মেশিন লার্নিং-এর মাধ্যমে মানুষকে গ্রাহক সেবা, অর্থনৈতিক সেবা, স্বাস্থ সেবা, ইত্যাদি নিশ্চিত করতে সহায়তা করছে।
এআই বিষয়টা এতটাই বিষদ যা খুব সহজ বিপনন পন্যে পরিনত করার চেষ্টাটা নিছক ছেলেমানুষি যা আমাদের বেড়ে ওঠা প্রজন্মের কাছে এআইকে সস্তা করে দিচ্ছে। ২০০০ সালের দিকেও আমরা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির সিএসই বিভাগে ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের মনে করতাম কম্পিউটার অপারেটর। এখনও অনেক প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার অপারেটর পদে বাধ্যতামূলক সিএসই স্নাতকধারী চেয়ে বসেন। আর কয়েকদিন পর রাস্তা ঘাটে টেমপ্লেট পাওয়া গেলেও চ্যাট-বট বানাতে এআই মেজর থাকা বাধ্যতামূলক হয়ে যেতে পারে। চাচা চৌধুরীর আমলের কম্পিউটারের ধারনা থেকে বের হয়ে আসতে হবে নাহলে আমাদের এআই কার্ডবোর্ডের ভিতরেই কূপমন্ডুক হয়ে থেকে যাবে।
Leave a Reply